দশের লাঠি একের বোঝা। কথাটি ছোট বেলায়
দেখেছিলাম, বইয়ের পাতায়। কথাটির যে ভাব, তা সম্প্রসারণ করে অনেক কিছু পেতাম,
বুঝতাম, বা বুঝাতাম। সুন্দর একটা বাস্তব কথা। তবে আমি এখন যদি বলি যে, কথাটি
মিথ্যা, তাহলে কি বিশ্বাস করবেন? করবেন না জানি। তবে মিথ্যাই যদি না হবে, তার
প্রয়োগ নেই কেন?!?
আজ সমাজের যেদিকে তাকাই, দেখি
নিরাশাবাদীরা ঘুরছে। তারা কাজ পায়না। দেশ ছেড়ে সোনার হরিণের খোঁজে লাখ লাখ টাকা খরচ
করে বিদেশে পাড়ি জমায়। তারপর! থাক। এটা নিয়ে এখন বলছি না। তবে কিছু মানুষ উপার্জনের জন্য কোন
চাকরী, মানে যে কোন চাকরী খোঁজে। নাহলে হা হুতাশ করতে করতে পরিবেশ দূষিত করে ফেলে।
আমি সবসময়ই একটা কথা বিশ্বাস করি,
তা হলো, আমাদের দেশে কাজের অভাব নেই। খুব ভালো কাজ করা যায় এবং খুব ভালোভাবে উপার্জন করা যায়।
তবে কিভাবে কি করলে আসবে এই সুন্দর উপার্জন? সত্যিই
তো! একটা প্রশ্ন এসে যাচ্ছে তাই না?
আমাদের দেশে কি কোন কাজ নেই?!
নিরাশাবাদীরা বলবে কই! দেশে কাজ
কই? আবার বলবে, কাজ ঠিকই আছে, তবে পয়সা দেবে কে? মানে পুঁজি। হ্যা, পুঁজি ছাড়া
অনেক কিছু হয়না। আবার অনেক কিছুই হয়। এখানেই আমার সেই কথাটি আসছে। আপনার আলো লাগবে
এবং তা ১০০ ওয়াট পরিমাণ। আপনার কাছে আছে ১০ ওয়াট পরিমাণ কয়েকটি। জলদি লাগিয়ে
ফেলুন, দেখবেন যতটি বাল্ব লাগিয়েছেন, তত গুণ আলো বেড়েছে। অর্থাৎ, ১০০ ওয়াটের জন্য
আপনার ১০ টি বাল্ব লাগবে। এখানে বাল্বের সাথে উপার্জনের কি সম্পর্ক! আশ্চর্য
হচ্ছেন? এবার আসুন, আপনি নিজেকে যদি ১০
ওয়াট মনে করেন, ১০০ ওয়াটের জন্য আপনার মতো আরো ৯ জনকে খুঁজুন। হয়ে গেলো। দশটা লাঠি
একসাথে বোঝা তৈরি করে ঠিকই, তবে দশজনের জন্যে একেকটা লাঠিই, বোঝা নয়। কথাটিকে শুধু
বইয়ের পাতায় রাখলে হবে না। বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে দেখুন, সত্যিই ফল পাবেন।
আমাদের দেশের শিক্ষার কোন মূল্যই
নেই। কি মূল্য আছে বলুন? সার্টিফিকেট অর্জনের জন্যই শুধু শিক্ষার দরকার ছিল।
সার্টিফিকেট পেয়ে গেলে শিক্ষাটা মূল্যহীন। কাজেই যদি না লাগাতে পারি, তাহলে এই
শিক্ষা বা বিদ্যার কি মূল্য? আমাদের দেশে বিদ্যাটা গ্রন্থগতই রয়ে যায়। প্রয়োজনে
যদি কাজে লাগে, ওটাতো কোন বিদ্যাই নয়! তাহলে? কি হবে বস্তা বস্তা বই পড়ে?
যাহোক, প্যাঁচাল বেশি হয়ে যাচ্ছে।
আমি বলতে চাচ্ছি, অন্য দেশে মানুষ কয়েকজনে মিলে সমবায় তৈরি করে। তৈরি করে
কোম্পানি। ছোট থেকে আস্তে আস্তে বিশাল অস্তিত্ব তৈরি হয়। নিজেদের পাশাপাশি বিরাট
কর্মসংস্থান তৈরি করে বিপুল লোকের উপার্জনের উপায়
তৈরি হয়। আর আমরা! একজনের সাথে আরেকজন মিশতেই পারিনা।
পরদেশে গিয়ে তাদের কর্মচারী হয়ে
তাদের উন্নয়নে জীবন পার করছেন। সেই কর্মচারী হতেও আপনাকে অনেক অর্থ ব্যয় করতে
হচ্ছে। তো ব্যয় যখন করছেন, তখন নিজে কর্মচারী না হয়ে কর্মচারী রাখুন না। স্ব-কোম্পানির
কর্মকর্তা হোন, ফ্যাক্টরির মালিক হোন। পারবেন। শুধু চেষ্টা করে দেখুন।
বিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহুর জন্ম
কিভাবে জানেন? বা নোকিয়া কোম্পানির জন্ম কাহিনী? বেকার কিছু যুবক, কর্মহীন অবস্থায়
শুধু পরিবারেরই নয়, সমাজেরও যেন বোঝা হয়ে গিয়েছিল ওরা। পরে নিজেদের কার কি করার
মতো ক্ষমতা আছে, সে সেই ধরণের কাজের বর্ণনা তুলে ধরল। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো
ইলেক্ট্রোনিক্স রিপেয়ারিং শপ দেবে। দিলোও তাই। নাম দিলো নিজেদের শহরের নামে,
নোকিয়া। সেই বেকারদের কোম্পানি সারা বিশ্ব অনেকদিন কাঁপিয়েছে।
আসুন, আপনার মেধা কাজে লাগান। পরোপকারী
কারো সহায়তা নিন। নিজের মেধার প্রকাশ এভাবেই করুন।
দশের লাঠি একের বোঝা, এর ইংরেজী
কিন্তু খুবই সহজ এবং এর দ্বারা অর্থটা বুঝতেও সহজ হবে। ওরা বলে টীমওয়ার্ক (teamwork)। এই টীমকে আমরা এভাবে দেখতে পারি।
Togather
Everyone
Achive
More
|
}
|
TEAM
|
একটা কাজ একা না করে একটা পুরা টীম মিলে যদি করা হয়, তাহলে
খুবই সহজ হয়ে যায়। পিঁপড়েরা টীম ধরে কাজের মাধ্যমে কত অসাধ্যই না সাধন করে। বৃহৎ
এবং শক্তিশালী শত্রুর হাত থেকে বাঁচতেও সহায়তা করে এই টীম বা দলবদ্ধতা।
তাই সবার কাছে আহ্বান, দলবদ্ধ হোন,
টীম তৈরি করুন, বা তৈরি করুন একটা কোম্পানি। পরদেশে না গিয়ে দেশে বসেই, নিজের
যতটুকু আছে, সমবায় বা কোম্পানি তৈরির মাধ্যমে ভিত পোক্ত করুন, নিজে বড় হোন, দেশকেও
বড় করুন।