শীতের সব্জি সারা বছরের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। সারা বছর চাষ করা কষ্টসাধ্য। শুধুমাত্র দামের জন্য চাষ করলেই হবে না। পুষ্টি নিশ্চিত করতে এগুলো দরকার আছে।
কথায় আছে, কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ! শীতে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে সব্জি উৎপাদিত হয়। যে সব্জি যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিকর। কিন্তু, প্রচুর উৎপাদনের ফলে বাজার ডাউন হয়ে যায়। এতে মধ্যবিত্তের জন্য পৌষের উপকারীতার পরিপূর্ণতা আসে। কিন্তু বেচারা উৎপাদক, অর্থাৎ চাষির সর্বনাশ হয়। উৎপাদন খরচ থেকে মুনাফা কম হওয়ায় তারা বিপাকে পড়ে যায়। মাঝমধ্যে দেখা যায়, ক্ষোভে দুঃখে ফসল নষ্ট করে দেয়। মধ্যস্বত্তভোগীদের কিন্তু কিছুই হয় না।
তাহলে! এর কি কোনো সমাধান নাই!
আছে। সহজ সমাধান। তবে, আমরা বাঙ্গালিরা যতটা না নীতি কথা বলি, তার চেয়ে বেশি দূর্নীতি করি। আমরা পন্ডিতি কথা বলতে পছন্দ করি, শুনতে বা মানতে নয়।
শীতের অধিকাংশ সব্জিই খুব সহজে সংরক্ষণ করা যায়। আমরা বাইরের দেশগুলোতে সারাবছর সব্জি দেখতে পাই। হ্যা, সেগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী হয়। অথবা চাষ হয়। (কিন্তু বাংলাদেশে বারোমাসকাল তা কষ্টসাধ্য এবং ভালো হয় না)। কিন্তু সংরক্ষিত সব্জি তো দেখেই থাকবেন।
আর তা হলো ভিনেগারে সংরক্ষিত সব্জি। একদম টাটকা সব্জির পুষ্টিমান সমৃদ্ধ।
বস্তুত আমাদের প্রধান খাদ্য উপাদানগুলো দীর্ঘ চেইনের পলিমারীয় যৌগ। যেমন ভাত, গম, আলু অর্থাৎ স্টার্চ হলো গ্লুকোজের পলিমার। আবার প্রোটিন (অর্থাৎ মাছ, মাংস, ডিম, ডাল) হলো অ্যামিনো এসিডের পলিমার।
আর ভিনেগার হলো ইথানয়িক এসিড বা অ্যাসিটিক অ্যাসিড (সংকেত CH3-COOH) এর জলীয় দ্রবণ।
পরিবেশের বিভিন্ন অবস্থায় জন্ম লাভ করা অসংখ্য অণুজীবের প্রভাবে খাদ্য উপাদানের এসব পলিমারীয় কাঠামোগুলো ভেঙে যায়। ফলে তার স্বাদ-বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এক কথায় খাদ্য পচে যায়। সুতরাং খাদ্যকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে অর্থাৎ খাদ্য সংরক্ষণ করতে হলে, এর কাঠামো নষ্ট করার মত অণুজীব যেন জন্মাতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হয়।
অণুজীব থেকে নিঃসৃত এনজাইম খাদ্য পচনের ফারমেন্টেশন বিক্রিয়ায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এনজাইমের প্রোটিন শিকলের নাইট্রোজেনে যে মুক্ত ইলেক্ট্রন জোড় থাকে তা এ প্রভাবন ক্রিয়ার জন্য active site সরবরাহ করে। কিন্তু ভিনেগারে উপস্থিত ইথানয়িক এসিড দ্রবণে যে প্রোটন (H+) সরবরাহ করে তা ঐ active site কে প্রশমিত করে। ফলে এনজাইম আর প্রভাবন ক্রিয়া ঘটাতে পারে না বলে খাদ্যের ফারমেন্টেশন হয় না। সুতরাং খাদ্য পচে না। অর্থাৎ এটি সংরক্ষিত থাকে। সুতরাং H+ আয়নের ঘনমাত্রা যত বেশি হয় অণুজীবের জন্য তত অধিক প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং খাদ্যের পচন তত ধীরে শুরু হয়।
যাহোক, সংরক্ষণ করাটাই বড়ো কথা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন