বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৫

শীতের সব্জি সারা বছরের জন্য সংরক্ষণ

শীতের সব্জি সারা বছরের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। সারা বছর চাষ করা কষ্টসাধ্য। শুধুমাত্র দামের জন্য চাষ করলেই হবে না। পুষ্টি নিশ্চিত করতে এগুলো দরকার আছে।



কথায় আছে, কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ! শীতে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে সব্জি উৎপাদিত হয়। যে সব্জি যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিকর। কিন্তু, প্রচুর উৎপাদনের ফলে বাজার ডাউন হয়ে যায়। এতে মধ্যবিত্তের জন্য পৌষের উপকারীতার পরিপূর্ণতা আসে। কিন্তু বেচারা উৎপাদক, অর্থাৎ চাষির সর্বনাশ হয়। উৎপাদন খরচ থেকে মুনাফা কম হওয়ায় তারা বিপাকে পড়ে যায়। মাঝমধ্যে দেখা যায়, ক্ষোভে দুঃখে ফসল নষ্ট করে দেয়। মধ্যস্বত্তভোগীদের কিন্তু কিছুই হয় না।




তাহলে! এর কি কোনো সমাধান নাই!
আছে। সহজ সমাধান। তবে, আমরা বাঙ্গালিরা যতটা না নীতি কথা বলি, তার চেয়ে বেশি দূর্নীতি করি। আমরা পন্ডিতি কথা বলতে পছন্দ করি, শুনতে বা মানতে নয়।
শীতের অধিকাংশ সব্জিই খুব সহজে সংরক্ষণ করা যায়। আমরা বাইরের দেশগুলোতে সারাবছর সব্জি দেখতে পাই। হ্যা, সেগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী হয়। অথবা চাষ হয়। (কিন্তু বাংলাদেশে বারোমাসকাল তা কষ্টসাধ্য এবং ভালো হয় না)। কিন্তু সংরক্ষিত সব্জি তো দেখেই থাকবেন।
আর তা হলো ভিনেগারে সংরক্ষিত সব্জি। একদম টাটকা সব্জির পুষ্টিমান সমৃদ্ধ।




বস্তুত আমাদের প্রধান খাদ্য উপাদানগুলো দীর্ঘ চেইনের পলিমারীয় যৌগ। যেমন ভাত, গম, আলু অর্থাৎ স্টার্চ হলো গ্লুকোজের পলিমার। আবার প্রোটিন (অর্থাৎ মাছ, মাংস, ডিম, ডাল) হলো অ্যামিনো এসিডের পলিমার।

আর ভিনেগার হলো ইথানয়িক এসিড বা অ্যাসিটিক অ্যাসিড (সংকেত CH3-COOH) এর জলীয় দ্রবণ।

পরিবেশের বিভিন্ন অবস্থায় জন্ম লাভ করা অসংখ্য অণুজীবের প্রভাবে খাদ্য উপাদানের এসব পলিমারীয় কাঠামোগুলো ভেঙে যায়। ফলে তার  স্বাদ-বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এক কথায় খাদ্য পচে যায়। সুতরাং খাদ্যকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে অর্থাৎ খাদ্য সংরক্ষণ করতে হলে, এর কাঠামো নষ্ট করার মত অণুজীব যেন জন্মাতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হয়।



অণুজীব থেকে নিঃসৃত এনজাইম খাদ্য পচনের ফারমেন্টেশন বিক্রিয়ায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এনজাইমের প্রোটিন শিকলের নাইট্রোজেনে যে মুক্ত ইলেক্ট্রন জোড় থাকে তা এ প্রভাবন ক্রিয়ার জন্য active site সরবরাহ করে। কিন্তু ভিনেগারে উপস্থিত ইথানয়িক এসিড দ্রবণে যে প্রোটন (H+) সরবরাহ করে তা ঐ active site কে প্রশমিত করে। ফলে এনজাইম আর প্রভাবন ক্রিয়া ঘটাতে পারে না বলে খাদ্যের ফারমেন্টেশন হয় না। সুতরাং খাদ্য পচে না। অর্থাৎ এটি সংরক্ষিত থাকে। সুতরাং H+ আয়নের ঘনমাত্রা যত বেশি হয় অণুজীবের জন্য তত অধিক প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং খাদ্যের পচন তত ধীরে শুরু হয়।

যাহোক, সংরক্ষণ করাটাই বড়ো কথা। 

শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

বিভিন্ন প্রকার প্লেট চিত্রসহ আলোচনা

 

ম্যান্টলের মধ্যে যে পরিচলন স্রোত কাজ করে, তার কারণে তার উপরে ভাসমান টেকটোনিক প্লেটগুলো বিভিন্ন দিকে গতিশীল হয়। যেসকল এলাকায় দুটি টেকটোনিক প্লেট পাশাপাশি অবস্থান করে, সেখানে সেগুলোর মধ্যে নিচের তিন ধরনের যেকোনো এক প্রকার স্থানান্তর দেখা যায়।

১। নিরপেক্ষ (Lateral): 

২। অপসারী (Spreading): 

৩। অভিসারী (Subduction): 



অভিসারী (Subduction): প্লেটগুলো একটি অপরটির দিকে এসে সংঘর্ষ ঘটতে পারে । তখন তুলনামূলকভাবে ভারী প্লেটটি অন্য প্লেটের নিচে ঢুকে যায়। সংঘর্ষের সীমানায় যেটি



উপরে থাকে, সেটি উপরে ওঠার সময় পর্বতমালা তৈরি করে। ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষে এভাবে হিমালয় পর্বতমালা তৈরি হয়েছে। সংঘর্ষের সীমানায় ভারতীয় প্লেট ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে ঢুকে গেছে। অভিসারী গতির কারণে বিভিন্ন প্রকার আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হয় এবং সঙ্গে বিভিন্ন মাত্রার ভূমিকম্পও হয়ে থাকে।



অপসারী (Spreading): টেকটোনিক প্লেটগুলো যখন একটি অপরটি থেকে দূরে সরে যেতে থাকে তখন সেগুলোর সীমানাকে বলে অপসারী প্লেট সীমানা। অপসারী প্লেট সীমানার সবচেয়ে চমকপ্রদ উদাহরণ হচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগরের ঠিক মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া মিড আটলান্টিক রিজ। সমুদ্রের তলদেশ থেকে বের হয়ে যখন এটি আইসল্যান্ডের ভেতর দিয়ে গেছে তখন স্থলভাগেও এটি দেখা যায়। অপসারী গতির কারণে সাধারণত সমুদ্রের তলদেশের বিভিন্ন প্রকার আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয়।

  মিড আটলান্টিক রিজ

 

 

নিরপেক্ষ (Lateral): একটি প্লেট অপরটির সঙ্গে পাশাপাশি পিছলে যেতে পারে তখন দুটো প্লেটের সংযোগস্থলকে বলে নিরপেক্ষ প্লেট সীমানা। এই ধরনের স্থানান্তরের কারণে সেই প্লেটের সীমানাতে প্রচুর শক্তি সঞ্চিত হয় এবং যখন সেই শক্তি সীমানার ধারণক্ষমতার বেশি হয়ে যায়, তখন ভূমিকম্পের মাধ্যমে সেই শক্তি নির্গত হয়। একটি অত্যন্ত পরিচিত নিরপেক্ষ প্লেট সীমানা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সান এন্ড্রিয়াজ ফল্ট লাইন। এই সীমানায় অচিন্তনীয় পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে বলে অনুমান করা হয় এবং যে কোনো সময়ে একটি বড় ভূমিকম্পের মাধ্যমে শক্তি নির্গত হবে বলে আশঙ্কা করা হয়।

  সান এন্ড্রিয়াজ ফল্ট লাইন

বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন চিত্রসহ বর্ণনা Assignment

 আমরা আমাদের সামনের বিভিন্ন বস্তু থেকে শুরু করে আকাশের চাঁদ- তারা প্রভৃতি নিজের চোখে দেখতে পারি। কিন্তু পৃথিবীর অভ্যন্তরের গঠন আমরা সরাসরি দেখতে পাই না। এ জন্য ভূতাত্ত্বিকরা ভূমিকম্পের সময় সিসমিক ওয়েভ (Seismic wave) নামে যে বিশেষ তরঙ্গের সৃষ্টি হয়, সেটি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। এই তরঙ্গ ভূমিকম্পের কেন্দ্রে তৈরি হয়ে পৃথিবীর অভ্যন্তরের বিভিন্ন ধরনের বস্তু থেকে বিভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয় এবং বিভিন্ন গতিতে চলাচল করে। চিকিৎসকেরা যেমন রোগীর শরীরের অভ্যন্তরের অবস্থা বোঝার জন্য ECG, X-Ray কিংবা CT Scan ইত্যাদির সাহায্য নিয়ে থাকেন, সেভাবে ভূতাত্ত্বিকরা সিসমিক ওয়েভের মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠনের ধারণা পেয়ে থাকেন।

পৃথিবীর গঠনের সঙ্গে ডিমের মিল
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন

পৃথিবীর গঠনের সঙ্গে ডিমের গঠনের এক ধরনের মিল রয়েছে। ডিমের যে রকম বাইরে খুবই পাতলা একটি শক্ত খোসা, পৃথিবীরও সেরকম বাইরে রয়েছে ভূত্বক। খোসার পরে ডিমের যে রকম রয়েছে ভেতরের সাদা অংশ, পৃথিবীর অভ্যন্তরেও সেরকম রয়েছে ভূ-আচ্ছাদন বা ম্যান্টল। ডিমের যেরকম মাঝখানের রয়েছে কুসুম, ঠিক সে রকম পৃথিবীর কেন্দ্রেও রয়েছে তার মজ্জা বা কোর। অর্থাৎ পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠনকে ভূত্বক, ম্যান্টেল এবং কোর এই তিনটি মূল ভাগে ভাগ করা যায়।

ভূত্বক (Crust): পৃথিবীর সবচেয়ে উপরের স্তরকে ভূত্বক বা ক্রাস্ট (Crust) বলা হয়। আমরা এই স্তরের উপরে থাকি এবং স্বাভাবিকভাবেই এই ত্বক সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানি। এই স্তরটি অন্যান্য স্তরের তুলনায় পাতলা ও ভঙ্গুর। পুরুত্ব সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার। এই ত্বককে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, (১) তুলনামূলকভাবে পুরু এবং কম ঘনত্বের মহাদেশীয় ভূত্বক এবং (২) তুলনামূলকভাবে সরু কিন্তু বেশি ঘনত্বের মহাসাগরীয় ভূত্বক হিসেবে। এই দুই প্রকার ভূত্বকই নানান ধরনের পাথর দ্বারা নির্মিত।



ম্যান্টল (Mantle): ভূত্বকের পরের স্তরটির নাম ম্যান্টল। ভূত্বকের সঙ্গে লাগানো ম্যান্টেলের স্তরটি কঠিন এবং ভঙ্গুর। উপরের ভূত্বক এবং নিচের এই স্তর নিয়ে তৈরি কঠিন অংশকে লিথোমণ্ডল (Lithosphere) বলে। এই লিথোমণ্ডল এই স্তরটি বড় বড় বেশ কয়েকটি টুকরায় বিভক্ত এবং সেগুলোকে টেকটোনিক প্লেট বলে। লিথোমণ্ডলের পরের স্তরে বেশি তাপমাত্রার কারণে পাথর গলিত অবস্থায় থাকে বলে সেটি পুরোপুরি কঠিন নয়। তাই তার উপর ভাসমান টেকটোনিক প্লেট মোটেও স্থির নয়, সেগুলো বিভিন্ন দিকে বছরে ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার সরে যেতে থাকে। টেকটোনিক প্লেটের এই গতিবিধি আমাদের ভূমণ্ডলের গঠনে খুব বড় একটি ভূমিকা পালন করে, টেকটোনিক প্লেটের গতিবিধির কারণেই পর্বতমালা এবং গভীর সমুদ্রে খাদের সৃষ্টি হয়েছে, এর কারণেই পৃথিবীতে ভূমিকম্প এবং অগ্ন্যুৎপাত হয়ে থাকে।

ম্যান্টেলের বাকি অংশটুকু পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠনের সবচেয়ে পুরু স্তর। এটি প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার পুরু এবং পৃথিবীর প্রায় ৮৫ শতাংশই এই ম্যান্টেল দিয়ে গঠিত। এই স্তরে তাপ এবং চাপ অত্যন্ত বেশি। ম্যান্টেলের ভেতরের স্তর কোর থেকে আগত তাপের পরিচলন ম্যান্টলের উপরে ভাসমান লিথোমণ্ডলকে স্থানান্তর করার প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।

মজ্জা বা কোর (Core): ম্যান্টলের নিচে রয়েছে মজ্জা বা কোর। পৃথিবী সৃষ্টির সময় যখন এটি অনেক উত্তপ্ত এবং তরল অবস্থায় ছিল, তখন লোহা, নিকেল এবং অন্যান্য ভারী মৌল মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে পৃথিবীর কেন্দ্রে এসে জমা হয়। কাজেই এই স্তরে লোহা ও নিকেল ধাতুর প্রাধান্য রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য ভারী ধাতু। মজ্জা বা কোর দুই অংশে বিভক্ত, উপরের অংশটি বা বহিঃস্থ মজ্জা তরল এবং সেটি প্রবাহিত হতে পারে। এই স্তরের উপরের ম্যান্টল ও অন্যান্য স্তরের ভরের কারণে এখানে চাপও বেশি। লোহা এবং নিকেলের প্রবাহের কারণে এখানে বিদ্যুৎ প্রবাহ হয় এবং সেই বিদ্যুতের কারণে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়ে থাকে। তোমরা সবাই জানো, এই চৌম্বক ক্ষেত্রের জন্য পৃথিবীতে কোনো চুম্বক ঝুলিয়ে দিলে সেটি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ঝুলে থাকে। এই চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে সূর্যের ক্ষতিকর সৌর ঝড় থেকে রক্ষা করে বলে পৃথিবীর বিভিন্ন জীবের বেঁচে থাকার জন্য এই চৌম্বক ক্ষেত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পৃথিবীর একেবারে অভ্যন্তরে রয়েছে অন্তঃস্থ মজ্জা। এই স্তরের বৈশিষ্ট্য বহিঃস্থ মজ্জার মতোই তবে তাপ এবং চাপ আরও বেশি। অধিক চাপের কারণে এই স্তর কঠিন। ধারণা করা হয় যে অন্তঃস্থ ও বহিঃস্থ মজ্জার গঠনকারী উপাদানের মধ্যে যেসব মৌল তেজস্ক্রিয়, সেগুলোর তেজস্ক্রিয়তা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ উত্তাপের উৎস।