শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৩

বর্নালি জুম চাষ (Bornali zum)

বর্নালি জুম। কেমন যেন একটা লাগছে। জুম চাষের কথা শোনেনি এমন ক'জন আছে? তবে এটি একটু ভিন্ন। জুম চাষ করা হয় পাহাড়ে। আর এটি করতে হবে অভাবে।

অভাবে! এটি আবার কেমন কথা! হ্যাঁ, অভাবে, জায়গার অভাবে। যাদের নিজস্ব প্রচুর জায়গা নেই। শহরের বাড়িতে হয়ত ছাদে একটু জায়গা। তারাই, সামান্য জায়গা থেকে সহজে প্রয়োজনীয় শাক সব্জির চাহিদা মেটাতে পারেন এই বর্নালি জুম পদ্ধতিতে।

বর্নালি জুম কেন করবেন? বাজারে আমরা যে সকল শাক সব্জি পাই, তাতে প্রিজারভেটিভ, কীটনাশক প্রভৃতির ভয় থাকে। দামের কথা রেখেই দিলাম। এছাড়াও, নিজের জন্মানো শাক সব্জি খাবার মজাই আলাদা। এর একটা আলাদা আত্মতৃপ্তি আছে।

হ্যাঁ, চাষ করতে হলে তো অবশ্যই জায়গা লাগবে। নিজের চাহিদা মেটাতে যে জায়গার দরকার, তা আপনার আয়ত্বের মধ্যে থাকতে হবে। কিন্তু আয়ত্বের মধ্যে সবার তো জায়গা থাকে না। কারো এমনিতেই জায়গার অভাব, কারো জায়গা আছে, কিন্তু শহরে নেই। তবে কি নিজের হাতের শাক সব্জি খেতে পারবে না?

হ্যাঁ, কেন নয়? বাড়িতে স্বল্প পরিমাণ যতটুকু জায়গা আছে, অথবা ছাদে আমরা চাহিদা মত শাক, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, লাল শাক, স্ট্রবেরি, টমেটো ইত্যাদি সবই চাষ করতে পারি। আর যে পদ্ধতিতে এটা করতে হবে, তার নামই হল বর্নালি জুম পদ্ধতি।

বর্নালি জুম-
জুম চাষের কথা আমরা সবাই জানি, পাহাড়ের অধিবাসীরা পাহাড়ের ঢালু জমিতে একই জায়গায় কয়েক প্রকার ফসল ফলায়, যার নাম জুম চাষ। আমাদের আজকের বর্নালি জুম ও তেমনি একই জায়গায় কয়েক প্রকার ফসল ফলানোর পথ বলবে।

আপনারা সকলেই টবে চাষ সম্বন্ধে জানেন। অনেকের বাড়িতে বা ছাদে ফলের গাছ আছে। কমছে কম ফুলের টব তো আছেই। তবে এটি একটু আলাদা। এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ৫ টি টব, (বেশিও করা যায়), যা একটির উপর একটি সাজানো। প্রত্যেক টবেই চাষ করা যায়।



এবার আসুন, কেমন টব ব্যবহার করতে হবে, সেকথায় আসা যাক। বর্নালি জুমে আসলে বিশেষ ধরণের টব ব্যবহার করা হয়েছে। পাঁচটি টবই ভিন্ন সাইজের। তবে গড়ন একই। প্রথম টব, যেটি সবচেয়ে বড়, তার ব্যস ৩ ফিট। উপরে ৩ ফিট, নিচে ২ ফিট। উচ্চতা ১ ফুট। আর একদম উপরের টবটির ব্যস ১.৫ ফিট। সবগুলোর উচ্চতাই ১ ফুট।
এখানে আবার ৪টি ১ ফুট উচ্চতা এবং ১ ফুট ব্যস বিশিষ্ট পাইপ ব্যবহার করতে হবে। যেগুলো টবগুলোর মাঝখানে বসাতে হবে। এতে আমাদের মাটির পরিমাণ কম লাগবে। তবে উপরের, অর্থ্যাৎ ৪ নম্বর পাইপের মাথা বন্ধ রাখতে হবে। কারণ, উপরের টবটি ছোট, তাই এটিতে ফাঁকা রাখা লাগবেনা।


পাইপ

টবের মধ্যভাগে পাইপটি রাখতে হবে

এভাবে একটার উপর একটা পাইপ রাখাতে মাঝখানে অনেক জায়গা ফাঁকা থাকবে।
এতে করে মাটি কম লাগবে। ছাদের উপর ওজন বাড়বে না।

তবে, উপরের পাইপটি একমুখ বন্ধ অথবা কিছু দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। কারণ, উপরের টবের মাঝে খালি রাখার দরকার নেই।

আমাদের জুম টব প্রস্তুত হয়ে গেল। তবে হ্যাঁ, প্রথমে বড় টবটিকে পছন্দ মত জায়গায় বসিয়ে মাঝখানে পাইপ বসাতে হবে। এরপর দোআঁশ মাটি দিয়ে টবটি এক ইঞ্চি খালি রেখে পূর্ণ করতে হবে। এবার দ্বিতীয় টব ও পাইপটিও একই ভাবে বসাতে হবে। চতুর্থ পাইপটির উপরিভাগ বন্ধ করার কথা মনে রাখতে হবে। আর একমুখ বন্ধ পাইপ হলে তো চিন্তাই নেই। পঞ্চম টবটি মাটি দিয়ে ভরার পর জুম প্রস্তুত।

কি কি চাষ করা সম্ভব? গুল্ম জাতিয় সকল প্রকার শাক বা সব্জিই উৎপাদন করা সম্ভব। একটি জুমে আপনি একই প্রকার চাষ করতে পারেন। তবে যদি এক এক অংশে আলাদা আলাদা ফসল ফলান, যেমন নিচে স্ট্রবেরি, এরপর লালশাক, পালংশাক, পুদিনা এমনি করে চাষ করেন, তাহলে জুমটি বর্নিল হয়ে একটা সৌন্দর্যের বস্তু হয়ে দাঁড়াবে। আর আসলে এজন্যেই এর নামকরণ করা হয়েছে বর্নালি জুম চাষ।

তবে দেরি কেন? আজই শুরু করুন। এবং নিজের উৎপাদিত শাক সব্জি, নো কীটনাশক, নো প্রিজারভেটিভ।
দাওয়াত দিলে খারাপ হয়না। তবে, সৃষ্টিকর্তার জন্য শুকরিয়া আদায় করবেন, যিনি এ সকল জ্ঞান মানুষ কে দিয়েছেন।



~

বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

ভিনেগারের অবিশ্বাস্য ব্যবহারসমূহ - Incredible uses of vinegar

ভিনেগার, বা সিরকা। একটি টক জাতিয়, এবং খাবার কাজে ব্যবহার যোগ্য তরল পদার্থ। আর একথাটি প্রায় সবারই জানার কথা। আজ এর কিছু অবিশ্বাস্য ব্যবহারের কথা তুলে ধরছি। আশা করি আপনিও যথেষ্ট উপকৃত হবেন।


হেয়ার কন্ডিশনার হিসাবেঃ-

আপনি আপনার প্রিয় ব্র্যান্ডের কন্ডিশনারের পেছনে না ছুটে চমৎকার প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা সম্পন্ন চুল পেতে পারেন। হ্যাঁ, ভিনেগার কথাই বলছি। অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ব্যবহারের পরই বুঝতে পারবেন, এটি কত বড় দক্ষ হেয়ার কন্ডিশনার। ডাই ন্যাচারাল হাউজহোল্ড ক্লিনারস এর সহ রচয়িতা বেটসি জ্যাবস তাঁর স্বামীর সাথে একমত হয়ে এই সাজেশন দিয়েছেন।

ব্যবহার বিধি- এক টেবিল চামচ ভিনেগার এক কাপ পানির সাথে স্প্রে বোতলে নিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিন। এরপর আপনার ভেজা চুলে স্প্রে করুন। ভালো ম্যাসেজ করুন। এরপর ২/১ মিনিট অপেক্ষা। শুকিয়ে যেতে দিন। হ্যাঁ, আপনার চুল হবে মসৃণ, রেশমি। তবে ভিনেগারের কোন গন্ধই পাবেন না।






পিঁপড়ার আক্রমণ ঠেকাতেঃ-



বসন্ত এবং গ্রীষ্ম কালে প্রায়ই বসতবাড়িতে পিঁপড়ার আক্রমণ হতে দেখা যায়। এরা খাবার জিনিষ, বিশেষ করে মরিচ, আটা সহ অন্যান্য খাবার জিনিষ নষ্ট করে, যেখানে পিঁপড়ার স্প্রে বা স্পিরিট ব্যবহার করা সম্ভব নয়। মাকু মুশকিল, (no problem) ভিনেগার আছেনা? সাদা ভিনেগার আপনাকে রেহায় দেবে। পিঁপড়াদের চলাচলের পথ, ফাটল, পাত্র রাখার জায়গা এবং এর আশপাশে এটি স্প্রে করে দিন। ব্যস। হয়ে গেল। এবার নিশ্চিন্তে কাজে মন দিন।





আটকে যাওয়া ড্রেইন খোলাঃ-

পরিবেশবিদ এলিজাবেথ রোজার্স পানি আটকে যাওয়া ড্রেইনের জন্য একটি সস্তা, বিষমুক্ত সমাধান দিয়েছেন। তিনি ড্রেইনের মধ্যে এক কাপ বেকিং সোডা ফেলে দেন। এরপর এর পেছনে লেলিয়ে দেন এক কাপ সাদা ভিনেগার। চমৎকার! পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এদের দুইয়ের জাদুকরী ক্ষমতায় আপনার ড্রেইন ক্লিয়ার! ফাইনালি, তিনি অবশ্য আট কাপ আধা ফুটন্ত পানি ফ্ল্যাশ করে ড্রেইন পরিষ্কার করতেন।





রং ওঠা এবং গুলে গিয়ে অন্য কাপড়কে নষ্ট করা থেকে বাঁচতেঃ-







কখনও কখনও, এমনকি আপনি যদি উজ্জ্বল ও গাঢ় রঙয়ের কাপড়কে আলাদাও করেন, তবুও কোন নতুন কাপড়ের রং গুলে গিয়ে কোন হালকা বর্ণের জিন্সের কাপড়কে খারাপ বা ছোপ দাগ ফেলতে পারে। এটাকে প্রতিরোধ করতে আধোয়া কাপড়গুলোকে ৫০/৫০ অনুপাতে পানি এবং সাদা ভিনেগারে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর, অন্যান্য রঙ্গিন কাপড়ের সাথেই এগুলোকে ধুয়ে ফেলুন। (ভিনেগার কাপড়কে ভবিষ্যতের রং গুলে যাওয়াকেও বন্ধ করতে পারে, যদিও এটা ১০০ ভাগ কটনের জন্য প্রযোজ্য।)






আপনার কর্মস্থলের কাপড় রিফ্রেশ করুনঃ-

আর্দ্রতা নিরোধক আণ্ডারওয়্যার বা খেলার পোশাক তীব্র ঘামের সময় হয়ত ঘাম শুষে নিতে পারে, তবে ধোয়ার পরেও ভয়াবহ দুর্গন্ধ থাকতে পারে। ডোন্না স্মেলিন, "দ্য ওয়ান মিনিট ক্লিনার প্লেইন অ্যান্ড সিম্পল" এর লেখিকা বলেছেন, যদি এই দুর্গন্ধ আপনি না চান, তাহলে কাপড় গুলোকে পুনরায় ওয়াশিং মেশিনে দিন এবং এক কাপ সাদা ভিনেগার মেশান। এক পাক ঘুরান। এরপর আধা কাপ বেকিং সোডা মিশিয়ে আরেক পাক। সাধারণভাবে ধুয়ে শুকিয়ে ফেলুন। চমৎকার ফলাফল!


ফলকে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করুনঃ-





আপনি নিজের পরিবারের জন্য বা কোন পার্টিতে, অথবা আপনি প্রফেশনাল কুক হিসাবে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত ফল ফলাদি পরিবেশন করতে চান। তবে কি ব্যাকটেরিয়া নাশক সাবান, বা স্যাভলন/ডেটল দিয়ে ফল ধুবেন!? তাহলে? না, চিন্তার কোন কারণ নেই। ভিনেগার এখানে বিজয়ী হবে। একটি স্প্রে বোতলে তিন কাপ পানির সাথে এক কাপ সাদা ভিনেগার মেশান। টমেটো, আপেল, তথা মসৃণ ত্বকের ফল, অন্যান্য ফল বা সব্জিতে ৬ বার স্প্রে করুন। পরিবেশনের আগে ধুয়ে নিন। ব্যাকটেরিয়া? শূন্যের কোঠায়।




গন্ধ দূর করতেঃ-





আপনি রান্নাঘর থেকে ভাজা মাছের গন্ধটা দূর করতে চাচ্ছেন, এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করেছেন। কিন্তু মাছ ভাজা গন্ধটা যাচ্ছেই না। কিছুই নয়, সামান্য একটা ট্রিক খাটান। একটা পাত্রে কিছুটা সাদা ভিনেগার ঢেলে রান্নাঘরে রেখে আসুন। রাতারাতি ওটা রান্নার গন্ধটা শোষণ করে নেবে।



আগাছা দমনেঃ-





আপনি যদি ফল বা শাকসবজি ফলান, আর তা খাবারের উদ্দেশ্যে না হলেও নিশ্চয় বাগানে কীটনাশক ব্যবহার করতে চাইবেন না। শুধুই ভিনেগার (কোনকিছু মেশানো ছাড়াই) আগাছার উপর স্প্রে করুন। এর অম্লতা ছোট বড় সব আগাছাই মেরে ফেলবে। (আগাছা বেশি বড় হলে শেকড় খুঁজে উপড়ে ফেলতে হতে পারে)।




জেলিফিশ এর কাঁটার আঘাত হতে রেহায়ঃ-

অধিকাংশ জেলিফিশের কাঁটার আঘাতই ক্ষতিকর নয়, কিন্তু যদি এমনটি হয়ে পড়ে? যন্ত্রণা আপনার সৈকতে ঘোরার আনন্দের বারোটা বাজিয়ে দেবে। তবে হ্যাঁ, ডঃ অজ এর দ্রুত পরিত্রাণ পাবার পদ্ধতি আপনাকে আবার আনন্দময় করে দেবে। একটা পাত্রে ভিনেগার নিন এবং আপনার আক্রান্ত এরিয়া ১৫ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ভিনেগারের এসিটিক এসিড, আপনার চামড়ার মধ্যে জেলিফিশের ফুটে থাকা কাঁটাগুলোকে অনবরত বিষ ছাড়ার কাজে বাঁধা দেবে। আর আপনিও পরিত্রাণ পাবেন । (তবে ডঃ অজ বলেছেন, যাদের এলার্জির সমস্যা আছে, বা রিউমেটিক ফেবার আছে, তাদেরকে জরুরী চিকিৎসা দিতে হবে।)




 সব্জির তরতাজা ভাব ফিরিয়ে আনতেঃ-





সাদা ভিনেগার লেটুসের তরতাজা অবস্থা ফিরিয়ে আনতে জাদুকরী ক্ষমতা রাখে। এক গামলা ভিনেগার মেশানো ঠাণ্ডা পানিতে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। এরপর এগুলোকে ধুয়ে ফেলুন। আপনি যদি লেটুস পাতা সালাদে দিতে চান, এটা সালাদ স্পিনারের মাধ্যমে শুকিয়ে নিন। (ভেজা পাতায় সস ধরবে না)।ভিন্ন স্বাদের জন্যে ভিন্ন ভিন্ন ভিনেগার মেশানো যেতে পারে।
কাঁচের পাত্র সমূহের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ-






আপনার শোকেস এ রাখা কাঁচ পাত্রে হালকা ধুলোর একটা স্তর পড়ে উজ্জ্বলতা নষ্ট করেছে? চকচকে পরিষ্কার করার জন্য আপনি কি করবেন? হ্যাঁ, তিন ভাগ পানিতে এক ভাগ ভিনেগার মেশান, দুই এক ফোঁটা ডিশ ওয়াশিং লিকুইড মেশান, এবং জিনিসগুলি ভেজান। এরপর গরম পানিতে ধুয়ে সুতী কাপড় দিয়ে মুছে রাখুন। নতুনের মতো উজ্জ্বল চকচকে হয়ে গেছে!








খড়খড়ি (blinds) পরিষ্কার করতেঃ-






কাঠ, ধাতু বা প্লাস্টিকের পর্দা তো ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ধুলোমুক্ত করা যায়। কিন্তু ধুলোর স্তর যদি বসে গিয়ে নোংরা শক্ত আবরণ তৈরি করে? একটি পুরোন (পরিষ্কার) মোজা হাতে পরে নিন। ভিনেগারে ডুবিয়ে মুছে নিন। খুব সহজেই নোংরা আবরণ দূর হয়ে যাবে।


আশা করি। সবাই উপকৃত হবেন।
ধন্যবাদ।