রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭

অ্যাকোয়াপনিক (একোয়াপনিক) Aquaponic


আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
অ্যাকোয়াপনিক/একোয়াপনিক (Aquaponic) একটি ইংরেজী শব্দ। যদিওবা এটি একক শব্দ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, আসলে কিন্তু দুটি আলাদা শব্দ থেকে এসেছে। Aquaculture এবং Hydroponic দুটি আলাদা পদ্ধতি। একোয়াকালচার হলো পানিতে জন্মে এমন প্রাণীসমূহ  চৌবাচ্চা বা কোন বাক্সে পানি রেখে পোষা বা চাষ করা। সোজা কথা হলো একোরিয়াম। তবে চাষের ক্ষেত্রে তো আর এমন কাচের আধার ব্যবহৃত হয়না। আর হাইড্রোপনিক হলো পানিতে সব্জি জাতিয় ফসল ফলানো সিস্টেম। আর এই দুই সিস্টেমের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে একোয়াপনিক সিস্টেম।

একোয়াকালচার

হাইড্রোপনিকস


একোয়াকালচার
হাইড্রোপনিক
জায়গা স্বল্পতার জন্য বা আধুনিক সুবিধার জন্য মানুষ মাছের চাহিদা মেটাতে এই একোয়াকালচার সিস্টেম চালু করে। অল্প স্বল্প জমিতে (যেখানে পুকুর করা সম্ভব নয়) বা বাড়ির ছাদে চৌবাচ্চা তৈরি করে মাছ চাষ শুরু করে। অনেকগুলো সুবিধার সাথে বড় একটি অসুবিধা হলো পানি নষ্ট হয়ে যাওয়া। একোরিয়ামের পানি যদি নিয়মিত না পাল্টানো হয়, তাহলে মাছের বিষ্টা এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট জমে পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে মাছ মারা যায়।...

«
»
«
»
«
»
«
»
«
একই কারণে ছাদে বা ঘরোয়া পরিবেশে মাটি
ছাড়া শুধু পানি ব্যবহার করে সব্জি চাষ করেও
অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। যেখানে
মাটি থেকে বিভিন্ন সংক্রমণের পরিমাণ অনেক
কম থাকলেও পানিতে উদ্ভিদের খাদ্য হিসাবে
রাসায়নিক সার মেশাতে হয়। ফলন অনেক
ভালো হলেও পুরোপুরি অর্গানিক না হওয়ায়
মানুষের মনে প্রশ্ন থেকেই যায়।


  
একোয়াকাচা হাড্রোনি             


ঠিক একারণে, একোয়াকালচার আর হাইড্রোপনিক দুই সিস্টেমকে একত্রিকরণ করা হয়, যা উপরের খুবই সাধারণ চার্ট হতে খুব সহজেই বোঝা যায়।

একোয়াপনিক 

একোরিয়াম বা খাঁচায় মাছ চাষ করলে জায়গা স্বল্পতা ও মাটির সংস্পর্শ না থাকায় মাছের উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য জমে খুব স্বল্প সময়েই বিষাক্ত এমোনিয়া তৈরি করে। এর ফলে মাছ মারা যায়। তাই নিয়মিত পানি বদলানো খুবই জরুরী। এদিকে হাইড্রোপনিক সিস্টেমের কথা তো বলেইছি। যেখানে কেমিক্যাল ব্যবহার করতে হয়। এখন, একোয়াকালচার আর হাইড্রোপনিক একত্রিত করেই হয়ে গেলো সকল সমস্যার সমাধান। আর নতুন এই সিস্টেমের নামই হলো একোয়াপনিক।

একোয়াপনিক 

একোয়াপনিক সিস্টেমে সামান্য খরচেই মাছ এবং সব্জি চাষ করা যায়। শুধু জায়গা স্বল্পতাই নয়, যারা কৃষি কাজে অভ্যস্ত নয়, বা মাঠে কাজ করতে পারেন না, তাদের জন্য এই পদ্ধতিতে মাছ এবং সব্জি চাষ করে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করাও সম্ভব। এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র মাছকে খাবার দিতে হয়, আর মাছের বর্জ্যসহ পানি সব্জিতে দিতে হয়। মাছের জন্য বিষাক্ত এমোনিয়া ব্যক্টেরিয়া দ্বারা ভেঙ্গে উদ্ভিদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করে। ফলে সব্জিতে কোন ধরণের সারই প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়েনা। তার মানে, একোয়াপনিক সিস্টেমের চাষাবাদ বিভিন্ন দিক দিয়ে সাশ্রয়ী, এবং অরগানিক হবার কারণে ভীষণ উপকারীও বটে।

একোয়াপনিক 

আজ একোয়াপনিক সিস্টেম সম্বন্ধে জানানো হলো। সামনে বাংলাদেশে খুবই সহজে কিভাবে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়, তার আলোচনা হবে।

সবার সুস্থতা কামনা করে সামনের পোষ্টের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপাতত বিদায় নিচ্ছি।

সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭

দশের লাঠি একের বোঝা

দশের লাঠি একের বোঝা। কথাটি ছোট বেলায় দেখেছিলাম, বইয়ের পাতায়। কথাটির যে ভাব, তা সম্প্রসারণ করে অনেক কিছু পেতাম, বুঝতাম, বা বুঝাতাম। সুন্দর একটা বাস্তব কথা। তবে আমি এখন যদি বলি যে, কথাটি মিথ্যা, তাহলে কি বিশ্বাস করবেন? করবেন না জানি। তবে মিথ্যাই যদি না হবে, তার প্রয়োগ নেই কেন?!?

আজ সমাজের যেদিকে তাকাই, দেখি নিরাশাবাদীরা ঘুরছে। তারা কাজ পায়না। দেশ ছেড়ে সোনার হরিণের খোঁজে লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পাড়ি জমায়। তারপর! থাক। এটা নিয়ে এখন বলছি না। তবে কিছু মানুষ উপার্জনের জন্য কোন চাকরী, মানে যে কোন চাকরী খোঁজে। নাহলে হা হুতাশ করতে করতে পরিবেশ দূষিত করে ফেলে।

আমি সবসময়ই একটা কথা বিশ্বাস করি, তা হলো, আমাদের দেশে কাজের অভাব নেই। খুব ভালো কাজ করা যায় এবং খুব ভালোভাবে উপার্জন করা যায়। তবে কিভাবে কি করলে আসবে এই সুন্দর উপার্জন? সত্যিই তো! একটা প্রশ্ন এসে যাচ্ছে তাই না?

আমাদের দেশে কি কোন কাজ নেই?!

নিরাশাবাদীরা বলবে কই! দেশে কাজ কই? আবার বলবে, কাজ ঠিকই আছে, তবে পয়সা দেবে কে? মানে পুঁজি। হ্যা, পুঁজি ছাড়া অনেক কিছু হয়না। আবার অনেক কিছুই হয়। এখানেই আমার সেই কথাটি আসছে। আপনার আলো লাগবে এবং তা ১০০ ওয়াট পরিমাণ। আপনার কাছে আছে ১০ ওয়াট পরিমাণ কয়েকটি। জলদি লাগিয়ে ফেলুন, দেখবেন যতটি বাল্ব লাগিয়েছেন, তত গুণ আলো বেড়েছে। অর্থাৎ, ১০০ ওয়াটের জন্য আপনার ১০ টি বাল্ব লাগবে। এখানে বাল্বের সাথে উপার্জনের কি সম্পর্ক! আশ্চর্য হচ্ছেন? এবার আসুন,  আপনি নিজেকে যদি ১০ ওয়াট মনে করেন, ১০০ ওয়াটের জন্য আপনার মতো আরো ৯ জনকে খুঁজুন। হয়ে গেলো। দশটা লাঠি একসাথে বোঝা তৈরি করে ঠিকই, তবে দশজনের জন্যে একেকটা লাঠিই, বোঝা নয়। কথাটিকে শুধু বইয়ের পাতায় রাখলে হবে না। বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে দেখুন, সত্যিই ফল পাবেন।

আমাদের দেশের শিক্ষার কোন মূল্যই নেই। কি মূল্য আছে বলুন? সার্টিফিকেট অর্জনের জন্যই শুধু শিক্ষার দরকার ছিল। সার্টিফিকেট পেয়ে গেলে শিক্ষাটা মূল্যহীন। কাজেই যদি না লাগাতে পারি, তাহলে এই শিক্ষা বা বিদ্যার কি মূল্য? আমাদের দেশে বিদ্যাটা গ্রন্থগতই রয়ে যায়। প্রয়োজনে যদি কাজে লাগে, ওটাতো কোন বিদ্যাই নয়! তাহলে? কি হবে বস্তা বস্তা বই পড়ে?

যাহোক, প্যাঁচাল বেশি হয়ে যাচ্ছে। আমি বলতে চাচ্ছি, অন্য দেশে মানুষ কয়েকজনে মিলে সমবায় তৈরি করে। তৈরি করে কোম্পানি। ছোট থেকে আস্তে আস্তে বিশাল অস্তিত্ব তৈরি হয়। নিজেদের পাশাপাশি বিরাট কর্মসংস্থান তৈরি করে বিপুল লোকের উপার্জনের উপায় তৈরি হয়। আর আমরা! একজনের সাথে আরেকজন মিশতেই পারিনা।




পরদেশে গিয়ে তাদের কর্মচারী হয়ে তাদের উন্নয়নে জীবন পার করছেন। সেই কর্মচারী হতেও আপনাকে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। তো ব্যয় যখন করছেন, তখন নিজে কর্মচারী না হয়ে কর্মচারী রাখুন না। স্ব-কোম্পানির কর্মকর্তা হোন, ফ্যাক্টরির মালিক হোন। পারবেন। শুধু চেষ্টা করে দেখুন।

বিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহুর জন্ম কিভাবে জানেন? বা নোকিয়া কোম্পানির জন্ম কাহিনী? বেকার কিছু যুবক, কর্মহীন অবস্থায় শুধু পরিবারেরই নয়, সমাজেরও যেন বোঝা হয়ে গিয়েছিল ওরা। পরে নিজেদের কার কি করার মতো ক্ষমতা আছে, সে সেই ধরণের কাজের বর্ণনা তুলে ধরল। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো ইলেক্ট্রোনিক্স রিপেয়ারিং শপ দেবে। দিলোও তাই। নাম দিলো নিজেদের শহরের নামে, নোকিয়া। সেই বেকারদের কোম্পানি সারা বিশ্ব অনেকদিন কাঁপিয়েছে।

আসুন, আপনার মেধা কাজে লাগান। পরোপকারী কারো সহায়তা নিন। নিজের মেধার প্রকাশ এভাবেই করুন।
দশের লাঠি একের বোঝা, এর ইংরেজী কিন্তু খুবই সহজ এবং এর দ্বারা অর্থটা বুঝতেও সহজ হবে। ওরা বলে টীমওয়ার্ক (teamwork)।  এই টীমকে আমরা এভাবে দেখতে পারি।


Togather
Everyone
Achive
More
}

TEAM


একটা কাজ একা না করে একটা পুরা টীম মিলে যদি করা হয়, তাহলে খুবই সহজ হয়ে যায়। পিঁপড়েরা টীম ধরে কাজের মাধ্যমে কত অসাধ্যই না সাধন করে। বৃহৎ এবং শক্তিশালী শত্রুর হাত থেকে বাঁচতেও সহায়তা করে এই টীম বা দলবদ্ধতা।



তাই সবার কাছে আহ্বান, দলবদ্ধ হোন, টীম তৈরি করুন, বা তৈরি করুন একটা কোম্পানি। পরদেশে না গিয়ে দেশে বসেই, নিজের যতটুকু আছে, সমবায় বা কোম্পানি তৈরির মাধ্যমে ভিত পোক্ত করুন, নিজে বড় হোন, দেশকেও বড় করুন।

মঙ্গলবার, ২৭ জুন, ২০১৭

ইনকাম(income) / উপার্জন

               উপার্জন শব্দটার সন্ধি-বিচ্ছেদ করলে আমরা পাচ্ছি উপ+অর্জনইংরেজীতে যা ইনকাম (income) ভাগ ভাগ করে অর্থ সবসময় তো আর মেলে না। বাংলায় যেমন উপ শব্দটার অর্থ সহযোগী, সহকারী, কাছাকাছি, পাশাপাশি ইত্যাদি। ইংরেজীতে আলাদা ভাবে অর্থ করলে পাওয়া যাচ্ছে in মানে মধ্যে বা ভেতরে, আর come মানে আসা।

       যাহোক, উপার্জন যদি সহযোগী বা পাশাপাশি অর্জন হয়, তবে অর্জনটা কি? হ্যাঁ, আমার ও প্রশ্ন এটা। তবে আমি যে সমাধানটা পেয়েছি তা জানাচ্ছি। কোন কিছু আশা করে বা লক্ষ্য করে কাজের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে যেতে সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়াটাই  হল অর্জন। যার ইংরেজী হল achievement.

       তারমানে, কোন লক্ষ্য নিয়ে কাজে নেমে লক্ষ্য পূরণ বা সেই কাঙ্ক্ষিত অর্জন পাওয়া পর্যন্ত যা পাওয়া যায়, তা হল উপার্জন। এক্ষেত্রে উপার্জনটা আমাদের লক্ষ্য হওয়া কোনভাবেই কাম্য নয়। ভালো কোনও উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নিয়ে কাজে লেগে পড়ুন, মন দিয়ে কাজ করুন, অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন। মাঝ দিয়ে আপনার উপার্জন তো আছেই।

উপার্জন করতে গিয়ে আমরা বরাবরই যে ভূল করে থাকি তা হলঃ-
লক্ষ্যের ধার ধারিনা। ভালো কিছু হব বা করব, এটার কথা মাথায় না এনে শুধু উপার্জন দরকার ভেবে কাজ খোঁজা।
আসলে এটা আমাদের সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারো লক্ষ্য কি হওয়া উচিৎ, তা তার মেধা, তার নিজের ইচ্ছায় হবে, নিজে লক্ষ্য নির্ধারণ করবে। সেই অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তুলবে, লেখাপড়া করবে। লক্ষ্য অর্জনে নিরলস কাজ করতে করতে একদিন লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। অভিভাবক বা সমাজ তাকে তার লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে। কিন্তু লক্ষ্য বেঁধে দেবেনা। আসলে কি তাই হয়? কস্মিন কালেও নয়। আমাদের অভিভাবকগণ নিজের ইচ্ছেমত সন্তানের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেন। কখনো ভেবে দেখেন না, তার সন্তানের মধ্যে কোন ধরণের প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে।

         কোনও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্রকে খুব আগ্রহের সাথে ডি সি ম্যাগনেটিক মোটরের উন্নয়ন বা তৈরি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। হতাশ হলাম। বলল, “ভাইয়া, জাস্ট তত্বগুলো পড়েছি, বাস্তব জিনিষের কিছুই বুঝিনি। বললাম, “তাহলে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব, এখন কি করবে?” বলল, “দেখি, কোন চাকরী টাকরি...

        রইস উদ্দিনকে বলেছিলাম লেখাপড়ার পাশাপাশি কিছু করতে। তার কথা হলো, টাকা ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। অনেক করে বুঝালাম, অনেক যুক্তি দেখালাম, উদ্যোগ থাকলে লক্ষ্য অর্জনে টাকা কোন বাঁধা নয়। কিন্তু তার একই কথা, টাকা ছাড়া নাকি দুনিয়ায় কোনোকিছুই সম্ভব নয়। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, লেখাপড়া শেষ করে কি করবে। বলেছিল, দেখি, একটা চাকরী বাকরি। গরীব মানুষ, এছাড়া আর কিই বা করার আছে।

       আর যখন কটা কামারের উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি দেখে রইসউদ্দীনের কথাটি বলেছিলাম, তখন সজোরে মাথা নাড়িয়ে বলল, "কি হয়ে যাচ্ছে দিন দিন মানুষ গুলো। তাদের লক্ষ্যই যদি এতোটুকু হয়, তাদের থেকে দেশ কি আশা করবে!"

      কামার, অথচ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য সে আমার কাছে আর দশজনার মতো নয়, বিশেষ মানুষ হিসেবেই ধরা পড়েছে। তার কথা, বড় কিছুর স্বপ্ন দেখতে হবে। সেই লক্ষ্যে কাজ করে এগিয়ে যেতে যেতে অবশ্যই একদিন লক্ষ্যভেদ হবেই। না হলেও কাছাকাছি তো হবে। তবে স্বপ্ন ছোট হলে তো... বড় কিছুর আশা করাটাই ভূল।

        দুঃখ হলো। আশেপাশে এমনি হাজারো রইস উদ্দীন লেখাপড়া করছে শুধুমাত্র একটা চাকরীর আশায়। তারা জানেনা, কি চাকরী করবে, কে দেবে চাকরী। আর কেনই বা দেবে। তাদের লক্ষ্য কোনও মতো উপার্জন। কোনকিছু অর্জন করার কথা তারা ভাবেও না। এরা উপার্জন করতে গিয়ে ন্যায়-নীতির তোয়াক্কা করে না। আর এভাবেই সমাজ, তথা দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে।
দেশে বিদেশে হাজারো উপার্জনওয়ালাদের দেখেছি। তারা কিছু পয়সার জন্য দেশকে (দেশের মান সম্মানকে) বেচে দিতে মোটেও দ্বিধা করে না। নচিকেতার সেই গানের মতো, কিছু পয়সা পেলে তারা বাপকেও দেবে বেচে। তারা বলে, লজ্জা/সম্মান নাকি তারা এয়ারপোর্টে রেখে গেছে। বিদেশে আবার লজ্জা কিসের! দেশে ফেরার সময় আবার এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে ফিরবে। দেশের মানুষ চায়ও তাই। তারা অর্থ দেখে। কিভাবে কামাচ্ছে তা কখনো দেখে না।

         এটাই কি মানুষের জীবন হওয়া উচিৎ?
কখনই নয়। আমি যাই করিনা কেন, একটা উদ্দ্যেশ্য থাকতে হবে। মানুষ হয়ে জন্মেছি। কোনমতো এদিক সেদিক করে জীবনটা কাটিয়ে দিলেই কি হলো! তাহলে তো সক্রেটিসকে চিনতাম না। আলেকজান্ডারকে জানতাম না। সম্রাট বাবর, আকবর, মাওলানা ভাসানী, শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক। হাজারো নয়, লাখো নয়, অগণিত মানুষের নাম আছে সারা দুনিয়ার ইতিহাসের পাতায়। আমাদের মতো ভাবলে তাঁরাও কিন্তু হারিয়ে যেতেন কালের গর্ভে।

        যাহোক। উপার্জন নিয়ে কথা বলতে এত কথা। হ্যাঁ। আয় উপার্জন করা লাগে। নাহলে সংসার তো চলবে না। তবে আপনি যাই করুন না কেন, আপনার কর্মের সাথে সততা, নিষ্ঠতা, নিজের সবথেকে ভালোটুকু দুনিয়াকে দিন। সেও আপনাকে মনে রাখবে। দারোয়ান, তবে খুব ভালো দারোয়ান। গাড়িচালক, তবে খুব ভালো গাড়িচালক। ব্যবসায়ী, খুব ভালো ব্যবসায়ী। ডাক্তার হয়েছেন। ভালো, আপনার উপার্জন কিন্তু কম নয়। কিন্তু তারপরও কেন মরা রোগীকে নিয়ে ব্যবসা করবেন! কত দরকার  আপনার?!? সর্দীই তো লেগেছে। তাহলে সাতটা চেকআপ কেনো!?! আবার সেই নচিকেতার কথা মনে পড়ে গেলো। হাসপাতালের বেডে, টিবি রোগীর সাথে, খেলা করে শুয়োরের বাচ্চা।

        আমি যা বলতে চাইছি তাহলো, ভালো পথে রোজগার করুন। ন্যায় পথে নীতির সাথে রোজগার করুন। অসৎ পন্থা কখনোই অবলম্বন করবেন না। কারণ, অসৎ পথে অর্থ আসবে ঠিকই, তাকে উপার্জন বলা যাবেনা। আর অর্জন, সেতো অনেক দূরের কথা।

        উকীল, পুলিস, শিক্ষক, যাই হোন না কেন। উদ্দেশ্য রাখুন ভালো কিছু করার। পৃথীবি আপনাকে মনে রাখবে। ভয় নেই। আপনার উপার্জন বন্ধ হবে না। সাথে পেয়ে যাবেন বিরাট এক অর্জন।