লিখেছেন নাজিরুল ইসলাম খাঁন (জিকো)
Thursday, 06 November 2008
S21 Romeo Victor কলিং S21 Romeo Bravo ওভার
S21 Romeo Victor দিস ইজ S21 Romeo Bravo গো অ্যাহেড
S21RV: Romeo Bravo-র লোকেশন কি? QSL ?
S21RB: QSL. আমি এখন Morning QTH-এ আছি, খবর কি তোমার?ওভার টু রোমিও ভিক্টর
S21RV: খবর ভালো, রোমিও ব্রাভো, আমি এখন বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এলাম সফ্টওয়্যার মেলা দেখতে। QSL ?
S21RB: QSL. হ্যাঁ, আমিও আসব বিকালে সময় পেলে। ঠিক আছে রোমিও ভিক্টর, এখন একটু ব্যাস্ত আছি, পরে কথা হবে।
S21RV: ঠিক আছে, রোমিও ব্রাভো, ফর দা টাইম বিয়িং, স্ট্যান্ডিং বাই এন্ড 73.
S21RB: ওকে, 73 এন্ড বাই বাই।
এটা কোন পুলিশ বা কোন বাসের সুপারভাইজারদের কথোপকথন নয়। আমার মনেও এই দুইটি অপশন এসেছিল যখন আমি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে মেলা দেখতে গিয়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সাদাসিধে একটা ছেলেকে ওয়াকিটকি (ওয়্যারলেস)দিয়ে কথা বলতে দেখলাম। তখন পাশে দাড়িয়ে কান পেতে ওপরের কথোপকথন শুনতে পেলাম, সেই ছেলেটি অপর প্রান্তের রোমিও ব্রাভো নামে কারও সাথে কথা বলছে। তাদের এসব সাদাসিধে কথা শুনে আমার আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। তাদের নিজেদের কথা শেষ করে আমার সামনের ছেলেটি যখন হাঁটা শুরু করলো, তখন আমি যেঁচে পড়ে তাঁর সাথে কথা বললাম। কথা প্রসঙ্গে ছেলেটির কাছে জানতে পারলাম, তাঁর নাম (রোমিও ভিক্টর) ইভান এবং ইভান AIUB তে BSc পড়ছেন দ্বিতীয় বর্ষে, আমার বয়সী। তখন তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাকে হাসি মুখে খুলে বললেন সবকথা। তাদের বলা হয় “রেডিও হ্যাম (Radio HAM)”, অ্যামেচার, যারা নিজেরা তাদের সময় এবং অর্থ ব্যয় করে চেষ্টা করেন প্রয়োজনের সময় দেশ এবং দেশের মানুষকে সেবা করতে। অ্যামেচার রেডিও ব্যবহারকারীরা তারা তাদের এই অ্যামেচার রেডিও ব্যবহার করে কথা বলতে পারেন আর্ন্তজাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের নভোচারীদের সাথে, তাদের অ্যামেচার স্যাটালাইট ব্যবহার করে গবেষণা ও পরীক্ষামূলক কাজ করেন, নানা ধরণের রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করেন। কথা বলতে বলতে রোমিও ভিক্টরের (ইভান) হাতের রেডিওতে শুনতে পেলাম, কে যেন ইংরেজি ভাষায় কি বলছে। ইভান তক্ষুণি রেডিওতে ঐ লোকের সাথে কথা বলতে শুরু করলো ইংরেজীতে। তাদের কথাবার্তাও ছিলো একদম সাধারণ। কথা শেষে ইভান আমাকে বললো, সে তখন কথা বলছিলো লন্ডনের আরেকজন অ্যামেচারের সাথে। আমি যতোই শুনছিলাম, ততোই যেন বিস্মিত হচ্ছিলাম। আমি টেলিকমিউনিকেশন ইন্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র হওয়ায় আমার আগ্রহ বেড়েই চলছিল। তখন ইভানকে “কিভাবে অ্যামেচার রেডিও ব্যবহারকারী হওয়া যায়” জিজ্ঞাসা করতেই সে আমাকে বললো, ঘটনা খুব সহজ। শুধু বিটিআরসি (Bangladesh Telecommunication Regulatory Communication) থেকে একটা ছোট্ট পরীক্ষা দিয়ে আমি “অ্যামেচার রেডিও ব্যবহারকারী লাইসেন্স” পেতে পারি। যখন আমি ইভানকে জিজ্ঞাসা করলাম, সারা মাসে আপনারা যে কথা বলেন, কোনো বিল দিতে হয়না ??? তখন ইভান আমাকে হাসতে হাসতে বললেন, সারা বছর যতক্ষণ ইচ্ছা কথা বলা সম্ভব, শুধু প্রতি বছর লাইসেন্স রিনিউ করতে হবে নামমাত্র মূল্যে, এছাড়া আর কোন টাকা লাগবেনা। আমি যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এই ছেলেটা বলে কি !!! এতো সহজ !!! তখন ইভান আমাকে একটা কথা বলে দিলো যে, অ্যামেচার রেডিওকে কোন প্রকার ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক উদ্দ্যেশে বা কাজে ব্যবহার করা যাবেনা। এসম্পর্কে জানতে পারবো কোথায় জানতে চাইলে ইভান “বাংলাদেশ অ্যামেচার রেডিও লীগ (বার্ল)”-এর ওয়েবসাইট www.barl.org এ বিস্তারিত লেখা আছে বলে জানাল এবং Radio HAM সর্ম্পকে নিজেকে ইন্টারনেটে খোঁজ নিতে বললো।
আমি সেই দিনই বাসায় এসে ইন্টারনেটে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, ইভানের প্রত্যেকটি কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। এটা ২০০৭ সালের প্রথম দিকের কথা। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অ্যামেচার রেডিও ব্যবহারকারীদের সাথে কথা বলে দেখতে পেলাম, তারা সবাই যে সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ড, তা নয়, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ ব্যাংকার, কেউ বিবিএর ছাত্র, আবার কেউবা সাধারণ পেষাজীবী। তাদের প্রত্যেকে এতো ভালো এবং সহযোগীতা মনোভাবাপন্ন, যে বলার মতো না। তাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে আমাদের দেশে প্রায় ২০০ অ্যামেচার রেডিও ব্যবহারকারী রয়েছে অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রয়েছে প্রায় ১৬০০০ হ্যাম বা অ্যামেচার রেডিও ব্যবহারকারী। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই অসংখ্য হ্যাম বা অ্যামেচার রেডিও ব্যবহারকারী রয়েছে এবং তাদের সবাই নানান পেশার মানুষ। তাদের সবারই একটি করে “কলসাইন(Call Sign)” আছে।
বাংলাদেশে অ্যামেচার রেডিও-এর কার্যক্রম সর্ম্পকে জানা যাবে www.barl.org থেকে। এছাড়াও অ্যামেচার রেডিও সংক্রান্ত আরও তথ্য জানার জন্য খোঁজ নিতে পারেন নিচের সাইটগুলো থেকে
www.arrl.org
www.qrz.com
www.itu.int
এবার আপনাদের বলি, অ্যামেচার রেডিও কিন্তু শুধু কথা বলার জন্য নয়, এই রেডিও ব্যবহার করে আপনি অ্যামস্যাট (অ্যামেচার স্যাটালাইট AMSAT), অ্যামেচার টেলিভিশন, স্লো-স্ক্যান টিভি (STV), ফাস্ট-স্ক্যান টিভি (FSTV), ডাটা ট্রান্সমিশনের বিভিন্ন মোডের ব্যবহার, মোর্স কোড (টরে-টক্কা), রেডিওকে মডেম হিসেবে ব্যবহার করার মতো আরো অনেক মজার মজার কাজ করতে পারবেন। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এসব কাজে আমাদের সাহায্য করার জন্য সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ HAM বসে আছে, যাদের পেশা অথবা শখই হলো বিনামূল্যে অন্যান্য HAM দেরকে সাহায্য করা এবং অ্যামেচার রেডিও নিয়ে গবেষণা করা, এদের মধ্যে অনেকেই শুরুতে বিজ্ঞানের “ব”-ও বুঝতেন না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ১৬০০০ হাজারের বেশি হ্যাম এই বিষয়ে যথেষ্ট এগিয়ে আছে। তারা স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে অ্যামেচার রেডিও নিয়ে আরও গবেষণা করার জন্য মহাকাশের বুকে নিজেদের অ্যামস্যাট (অ্যামেচার স্যাটালাইট) পাঠিয়েছে, যা বিশ্বের যে কোন হ্যাম বিনা পয়সায় ব্যবহার করতে পারে ! এসব কাজে বিশ্বের সব দেশের সরকার/যথাযথ কতৃপক্ষ যথেষ্ট এবং সর্বাত্বক সহায়তা করেন, যার ছিটেফোঁটাও বাংলাদেশে নেই।
বাংলাদেশে দীর্ঘ চার বছর অ্যামেচার রেডিও ব্যবহারকারীদের পরীক্ষা নেয়া এবং লাইসেন্স প্রদান বন্ধ থাকলেও সাম্রতিককালে বাংলাদেশের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ মহলের সহায়তা এবং অ্যামেচারদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) আবার তাদের পরীক্ষা নেয়া এবং লাইসেন্স প্রদান কার্যক্রম শুরু করেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত www.btrc.gov.bd তে পাওয়া যাবে।
আর অ্যামেচারদের সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে সহায়তা নিতে পারেন “গুগলের”।
ধন্যবাদ।
জিকো
www.zicobaby.tk
তথ্যঋণ: বেলায়েত হোসেন রবিন (কলসাইন >> S21RB)।
This is copy-paste post. But thanks for not posting own name. Write more.
উত্তরমুছুন